কোরআন তেলাওয়াত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শুধুমাত্র মুখস্থ করার উদ্দেশ্যই নাযিল হয়নি।বরং কোরআন নাযিল হয়েছে মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে, মানুষকে আলোর পথে পরিচালিত করতে। মানুষের ভিতর থেকে সকল কুঠিলতা, কুলষতা ও সকল অন্ধকার দূর করতে। এজন্য আমাদের নিয়মিত সর্বদা কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে এবং এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে জীবনকে সাজাতে হবে এবং মানুষকে কোরআন এর দাওয়াত দিতে হবে। আর এজন্য নিয়মিত সর্বদা কুরআন তেলাওয়াত করার পরেও যদি তা আমাদের মুখস্থ না থাকে তবুও এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। এই পোস্টে কোরআন তেলাওয়াতের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
 |
কুরআন তেলাওয়াতের গুরুত্বঃ AL-quran. |
👉💟💬কুরআন মানুষের অন্তরের কলুষতা দূরকারী।
👉💕Written by Nazrul Ibn Abul Bashar.
সূচনাঃ
কোরআন তেলাওয়াত ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। কোরআন তেলাওয়াত করলে মানুষের অনেক দুনিয়াবী কল্যাণ এবং পরকালীন মুক্তির পথ সুগম হয়। কোরআন তেলাওয়াত মানুষের অন্তরকে পবিত্র করে, তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং তার ঈমান বৃদ্ধি করে।
কুরআন তেলাওয়াত এর গুরুত্ব নিয়ে একটি গল্পঃ
এক ব্যক্তি প্রচুর কোরআন তেলাওয়াত করত, তবে তার থেকে কিছুই তার মুখস্ত থাকত না। ফলে
একদিন তার ছোট ছেলে তাকে জিজ্ঞাস করল, তুমি এত কোরআন পড় কিন্তু কিছুই মুখস্ত রাখতে পার না। তাহলে এতো তেলাওয়াত করে কি লাভ?
তিনি বললেন, আচ্ছা, আমি তোমাকে এই প্রশ্নটির উত্তর দিব, তবে তার আগে তুমি এই বেতের ঝুড়িটি দিয়ে সমুদ্র থেকে পানি এনে আমাকে দেখাও। ছেলেটি বলল, এটাতে পানি ভরে আনা তো অসম্ভব ব্যাপার।কেননা এতে পানি থাকবে না। লোকটি বলল, তবুও চেষ্টা করে দেখো।
বেতের ঝুড়িটি মূলতঃ কয়লা আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হত।
ছেলেটি ঝুড়িটি নিলো এবং সমুদ্রের দিকে রওয়না হল৷ সমুদ্রের পানি তাতে ভরে পিতার কাছে নিয়ে আসতে আসতে ঝুড়িটি থেকে সব পানি বের হয়ে গেল।
এবার সে পিতাকে বলল, এতে কি লাভ? পানি তো সব বের হয়ে যাচ্ছে! ****
পিতা বলল, চেষ্টা চালিয়ে যাও।
ছেলেটি দুইবার, তিনবার, চারবার, পাঁচবার এভাবে করেক বার চেষ্টা করেও পানি ধরে রাখতে পারলো না। অবশেষে ক্লান্তশ্রান্ত বদনে পিতার কাছে ফিরে এসে বললো, আমার পক্ষে পানি দিয়ে এই পাত্রটিকে ভরে আনা সম্ভব না।
পিতা তখন ছেলেটিকে বললো, তুমি কি ঝুড়িটির মধ্যে খেয়াল করেছো?
ছেলেটি বললো, হ্যা, ঝুড়িতে আমি পানি ধরে রাখতে পারিনি, তবে পানি ঝুড়ির মধ্যে থাকা কয়লার ময়লা ধুয়ে সাফ করে দিয়েছে। এখন সেটি পরিষ্কার ও চকচক করছে।
পিতা বলল, তুমি ঠিক ধরেছ। কুরআনও আমাদের অন্তরের সাথে একই কাজ করে। অর্থাৎ দুনিয়া ও দুনিয়াবি কাজের কারণে আমাদের অন্তর কলুষিত হয়ে যায়। কোরআন সমুদ্রের পানির মতো আমাদের অন্তরকে পাক-সাফ করে দেয় যদিও আমরা তার থেকে কিছুই আমাদের অন্তরে সংরক্ষণ করে রাখতে না পারি।
মনে রেখো, কোরআনের নাযিলকৃত প্রথম আয়াত "পড়", শুধু "মুখস্ত করার চেষ্টা করো" তা নয়।
সুতরাং কোরআন মুখস্ত করতে না পারার কারণে শয়তান যেন আমাদের মনে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করতে না পারে এবং কোরআন পড়া থেকে দূর রাখতে না পারে৷
© শায়েখ আলী সাল্লাবী (হাফ.)।
****
বিশ্লেষণঃ এই গল্পটি কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। লোকটি প্রচুর কোরআন পড়ত, তবে তার থেকে কিছুই তার মুখস্থ থাকত না। এতে তার ছেলেটি অবাক হয় এবং তাকে জিজ্ঞাসা করে, তিনি এত সময় কোরআন পড়েন কিন্তু কিছুই মুখস্থ রাখতে পারেন না, তাহলে এতো তেলাওয়াত করে কি লাভ?
লোকটি তার ছেলেকে একটি বেতের ঝুড়ি দিয়ে সমুদ্র থেকে পানি আনতে বলে। ছেলেটি চেষ্টা করে কিন্তু ঝুড়িতে পানি ধরে রাখতে পারে না। এতে পিতা তাকে বলে, পানি ঝুড়ির মধ্যে থাকা কয়লার সকল ময়লা ধুয়ে সাফ করে দিয়েছে।কুরআনও ঠিক তেমনিভাবে আমাদের অন্তরের সাথে একই কাজ করে অর্থাৎ, কোরআনও মানুষের অন্তরের কলুষতা দূর করে।
শিক্ষাঃ এই গল্পটি থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, কোরআন তেলাওয়াতের প্রধান উদ্দেশ্য হল মানুষের সঠিক পথের দিশা পাওযা এবং অন্তরকে পবিত্র করে নিজেকে ভালো পথে পরিচালিত করা। মুখস্থ করার জন্য কোরআন পড়া হলেও, মুখস্থ না থাকলেও কোরআন তেলাওয়াতের উপকারিতা রয়েছে। কোরআন তেলাওয়াত মানুষের অন্তরকে প্রশান্ত করে, তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং তার ঈমান বৃদ্ধি করে।
****
কোরআন তেলাওয়াতের কিছু উপকারিতা হলো:
- আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা
- ঈমান বৃদ্ধি পায়
- নিজেকে এবং অন্যকে সৎ কাজের দিকে উৎসাহিত করা যায়
- নিজেকে অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা যায়
- অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা যায়
- দুঃখ-কষ্ট দূর করতে সাহায্য করা, কেননা এতে দুঃখ-কষ্ট বেশি অনুভব হয় না।
- অন্তর প্রশান্ত থাকে।
- ধৈর্যশীল হতে উৎসাহিত করা
- মনের প্রশান্তি লাভ করা ইত্যাদি।
তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করা।
আমরা যদি নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করি এবং এর অর্থ অনুধাবন করি, তাহলে আমাদের জীবনে নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলি আসতে পারে:
- ****
আমরা আরও ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারি।
- আমরা আল্লাহর প্রতি আরও বেশি ভালোবাসা ও ভক্তি অনুভব করতে পারি।
- আমরা দুনিয়ার জীবনের প্রতি ঈর্ষা ও হিংসা থেকে মুক্তি পেতে পারি।
- আমরা জীবনের উদ্দেশ্য ও অর্থ খুঁজে পেতে পারি।
- আমরা পরকালের জন্য প্রস্তুত হতে পারি।
পরিশেষেঃ কোরআন তেলাওয়াত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরআন তেলাওয়াত শুধুমাত্র মুখস্থ করার জন্য নয়, সঠিক পথের সন্ধান পাওযার জন্য এবং অন্তরকে পবিত্র করার জন্যও করা হয়। কোরআন তেলাওয়াত মানুষের জীবনে অনেক উপকারিতা বয়ে আনে।
👉💕Written by #nazrulibnabulbashar.
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url